ভালো থাকুক ধরিত্রী মাতা

উইলিয়াম নকরেক

কয়েকদিন যাবৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতের যমুনা নদী দূষণের ছবি ও মৌলভীবাজারের মাধবকুন্ড জলপ্রপাত এলাকায় মাছ ও বিভিন্ন জলজ প্রাণী মরে যাওয়ার ছবি দেখছিলাম বারবার। কেন যেন মেনে নিতে পারছিলাম না।

ভালো থাকুক ধরিত্রী মাতা

এই বন, এই পাহাড়, এই বনের প্রাণী, এই অরণ্যের পশু -পাখি, নদ- নদী, ঝিরি ঝরনা যতদিন আদিবাসীদের কাছে ছিলো, ততদিন এই বন, এই পাহাড়, এই অরণ্যের প্রাণী, পশু -পাখি, নদ- নদী, ঝিরি ঝরণা নিরাপদ ছিলো। নরওয়ের এক আদিবাসী কবি পাওলোস উসি একটি কবিতা লিখেছেন। বিশিষ্ট কলামিষ্ট ও আদিবাসী নেতা সঞ্জীব দ্রং উনার একটি কলামে কবিতাটি বাংলায় রূপান্তর করেছিলেন-

“যতদিন আমাদের নদী ছিল

নদীতে নীল জল ছিল

মাছেরা সাঁতার কাটতো।

যতদিন ভূমি ছিল আমাদের, সবুজ ঘাস ছিল

পশুপাখি আনন্দে বিচরণ করতো।

যতদিন আমাদের বনে বড় বৃক্ষ ছিল

আর তাতে বনের প্রাণীরা লুকাতে পারতো,

ততদিন পৃথিবীতে আমরা নিরাপদ ছিলাম।"

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের পানিতে বিভিন্ন জাতের মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী বিষক্রিয়াই মরে ভেসে উঠে। (০৫ নভেম্বর ২০১৯)

আদিবাসীদের সংগ্রামময় জীবনের প্রায় সবটুকুই প্রকৃতি নির্ভর। আর তাইতো প্রকৃতিও তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ায়। এই বন/পাহাড়ের বুকে

তারা আশ্রয় নিয়ে নতুন স্বপ্ন রচনা করে, পাহাড়-গাছপালা, লতাপাতা,পশুপাখি, ঝরণা,ছড়া থেকে শিখে নেয় কীভাবে বেঁচে থাকতে হয়। এই প্রকৃতির সঙ্গে আদিবাসীদের আত্মিক সম্পর্ক। তারা এই বন/পাহাড়, গাছপালা, বনের পশুপাখি ঝিরি ঝরনাকে কৃতজ্ঞতা জানায়, ধন্যবাদ জানায়। তাদেরকে রক্ষা করার জন্যে,বেঁচে থাকার উপকরণ দেয়ার জন্যে।

আজও যেখানেই আদিবাসীদের ‘বাস’ এখনও সেখানেই বন,পাহাড় আর হাজারো গাছপালা ও প্রাণবৈচিত্র্য টিকে রয়েছে। এই ধরিত্রী, বন, এই পাহাড়,এই অরণ্যের প্রাণী,পশু -পাখি,নদ- নদী,ঝিরি ঝরণা ভালো থাকুক। ভালো থাকুক আমাদের নতুন প্রজন্মেরা। যারা হারাতে বসেছে তাদের সবুজ ভবিষ্যৎ।

যমুনা নদীর পানি দূষিত হয়ে গেছে।

সঞ্জীব দ্রং লিখেছেন, "যখন নদী শুকিয়ে যায়, জল দূষিত হয়, বন উজাড় করা হয়, আদিবাসীদের ভূমি জোর করে কেড়ে নেওয়া হয়, যখন বন্যপ্রাণীরাও হারিয়ে যায়, তখন পৃথিবী কি বাসযোগ্য থাকে?" যারাই বন, পাহাড়, নিজের বাসভূমি রক্ষা করতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়/দিয়েছে। তাদেরকেই ব্রাজিলের আদিবাসী নেতা অ্যামাজনের ভূমি ও পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনকারী পাওলো পাওলিনো গুয়াজাজারা এর মত মৃত্যুবরণ করতে হয়। অথচ এই আদিবাসীদের জন্যেই পৃথিবীটা আজও বাসযোগ্য।

লেখাটি ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বরে লেখা।